জীবননগরে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভবা
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
চুয়াডাঙ্গার সিমান্তবর্তী জীবননগর উপজেলার বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে এখন শুধুই হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ যে দিকে তাকানো যায় শুধুই সরিষার ক্ষেত। শত শত মৌমাছির গুঞ্জনে মখিরিত চারপাশ।মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের রঙে দু’চোখ ভরে যায়। এ বছর বিপুল পরিমাণ জমিতে এ শস্যের আবাদ হয়েছে এ অঞ্চলে। আর তাই প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ হানা না দিলে সরিষার বাম্পার ফলনের আশাবাদি কৃষকরা।
জীবননগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়,জীবননগর উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সরিষা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নে প্রতি বছর প্রচুর পরিমান জমিতে সরিষার আবাদ হয়ে থাকে। ফলনও বেশ ভাল হয়। ইরি-বোরো আবাদে খরচ বেশী হওয়ায় এবং ঝুঁকি থাকায় ধানের পরিবর্তে চলতি বছর কৃষকেরা সরিষা আবাদে ঝুঁকে পড়ায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার বেশী জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
তবে এ বছর অতি বর্ষণের কারণে নিচু জমি ও বিল-খালে পানি জমে থাকায় কৃষকেরা এসব পতিত জমিতে সরিষার আবাদ করতে পারেনি। সরিষা চাষে ঝুঁকি কম থাকায় এবং স্বল্প সময়ে বেশী লাভ হওয়ায় কৃষকরা বর্তমানে সরিষা চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
জীবননগর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুজ্জামান জানান, চলতি বছর উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪৮০ হেক্টর জমিতে এবং আবাদ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর জমিতে। উপজেলায় এ বছর বারি-৯ ও বারি-১১ উফসী জাতের সরিষার আবাদ বেশী হয়েছে। তবে কিছু জমিতে চাষীরা টরি-৭ জাতের সরিষার আবাদও করেছেন।
এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পাশাপাশি কৃষকদের ধারণা কোন প্রকার রোগবালাই আক্রমণ না করলে কিংবা প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ হানা না দিলে উপজেলায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তিনি।
আন্দুলবাড়ীয়ার বিশিষ্ট চাষী মহিদুল ইসলাম মধু শেখ জানান, এ বছর তার দু’বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন।সরিষার ক্ষেত বেশ সুন্দর হয়েছে। কোন রোগ-বালাই দেখা না গেলে প্রতি বিঘা জমিতে কমপক্ষে ৫ মণ থেকে ৬ মণ হারে ফলনের আশা করা হচ্ছে। অনেক কৃষক আগাম সরিষা কেটে জমিতে বোরো ধানের আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গোপালনগর গ্রামের কৃষক সিরাজ জানায়,সরিষা আবাদের পর জমিতে ধান ভাল হয়। কারণ জমিতে সার কম লাগে। তা ছাড়া সরিষার গোড়া ও পাতা সবুজ সার হিসাবে কাজ করে।
উপ-সহকারী কর্মকর্তা মুন্সী আব্দুস সালেক জানান, একটি জমিতে আগাম সরিষার আবাদ করা হলে পরে ঐ একই জমিতে অনায়াসে বোরো ধানের আবাদ করা যায়। এতে একই জমি থেকে অল্প সময়ের ব্যবধানে দু’টি ফসল উৎপাদন হওয়ায় চাষীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। এক বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করতে ২০০০-২৫০০ টাকা খরচ হয়। সরিষার ফলন ভাল হলে এক বিঘা জমিতে ৬-৭ মণ পর্যন্ত সরিষা পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সালমা জাহান নিপা জানান,উপজেলায় চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ জমিতে উফসী জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দিলে উপজেলায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কৃষকদের সরজমিনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন এবং তদারকিও করছেন।
উপজেলার,গয়েশপুর,নতুনপাড়া,বেনীপুর,যাদবপুর,খয়েরহুদা,কাশিপুর,উথলী,নারায়নপুর,ধোপাখালী,হাসাদহ,বাঁকা,মিনাজর,আন্দুলবারীয়া,গঙ্গাদাসপুর,কালা,কয়ার বিস্তৃর্ণ মাঠে ব্যাপক হারে সরিষার আবাদ হয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/জেডএমলি